বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের আইন-শৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কেপিআই, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা রক্ষা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, জননিরাপত্তামূলক কাজ, পরিরেশের ভারসাম্য রক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আত্বনির্ভরশীলতা, পরিকল্পিত পরিবার গঠন, দারিদ্র্য বিমোচন, নিরক্ষতা দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, জাতীয় ও উপ-নির্বাচন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন - ঈদ, পূজা, বড়দিন, নববর্ষ ইত্যাদির নিরাপত্তা বিধান করাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করে থাকে। ১৯৪৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি এ বাহিনী গঠিত হয়। ১৯৫২-এর ভাষা অন্দোলনে এই বাহিনীর সদস্য আনসার প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বার শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মুজিব নগরে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীসহ ১২ জন আনসার সদস্য বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘‘গার্ড অব অনার” প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম আনসার ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়। বর্তমানে এ বাহিনীর ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়নসহ ৩৮টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আইন-শৃংখলা রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন প্রশংসনীয় অবদান রাখায় সরকার এ বাহিনীকে ১৯৯৮ সালের ১০ মার্চ জাতীয় পতাকা প্রদান করেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বাহিনীকে “স্বাধীনতা পদক ২০০৪” প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে ১০ম সাউথ এশিয়া সাব গেমস্-এ এই বাহিনীর সদস্যরা সর্বমোট ১১টি স্বর্ণ পদক লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বৃহত্তর এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়নের ৭২৭২ জন সদস্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৬০০ জন হিল আনসার ও ৭৮৮৭ জন হিল ভিডিপি পার্বত্য এলাকায় অপারেশন উত্তরণে সহায়তা প্রদান করছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী অভিযানে অত্যন্ত সুনামের সাথে ১০(দশ)টি ব্যাটালিয়নের মোট ২৬৩৯ জন সদস্য সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছে। সমতল এলাকায় পুলিশের সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি রক্ষার কাজে ১০টি ব্যাটালিয়নের ৪১৬০ জন সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রায় ৪০০০০ অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার সদস্য সরকারি বেসরকারি সংস্থা ও কেপিআই সমূহের নিরাপত্তা সেবায় নিয়োজিত আছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (RAB) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাসহ অত্র বাহিনীর মোট ৫১৯ জন (পুরুষ ও মহিলাসহ) ব্যাটালিয়ন সদস্য প্রেষণে নিয়োজিত আছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাবৃন্দ SSF এ নিয়োজিত আছেন। এ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ক্ষুদ্র পরিসরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করেছেন। এ বাহিনীর স্থায়ী, অস্থায়ী ও স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় ৬০ লক্ষ সদস্য-সদস্যা রয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিকল্পে বাহিনীর সদস্য-সদস্যাদের বিভিন্ন কারিগরি ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারীদেরকে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে জামানত বিহীন ঋন প্রদান করা হয়। প্রতি বছর ৩২ টি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে এ বাহিনীর প্রায় ৫০০০ জন সদস্য-সদস্যাকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী সদস্য-সদস্যাদের ১০% কোটা সুবিধা রয়েছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন ও সরকারের নির্দেশে অন্যান্য বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন কল্পে বাহিনীর সদস্যাদের বিভিন্ন কারিগরি ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারি বেসরকারি সংস্থা সমূহের চাহিদার ভিত্তিতে নিরাপত্তা সেবা প্রদান, প্রশিক্ষণ ও অঙ্গীভূত করণের মাধ্যম কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সভা সেমিনারের মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধি তথা দেশের সামগ্রিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যপক অবদান রাখছে এবং এ বাহিনীর দায়িত্বের পরিধি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস